SCOTTISH UPLANDS
###################################
GARDEN AND A COMPUTER ="If you have a garden and a library, you have everything you need."
#######################
"তব কথামৃতং তপ্তজীবনং, কবিভিরীড়িতং কল্মষাপহম্ ৷
শ্রবণমঙ্গলং শ্রীমদাততং, ভুবি গৃণন্তি যে ভূরিদা জনাঃ ৷৷"
কথামৃতে আজকের দিন-
সার্কাস রঙ্গালয়ে -- গৃহস্থের ও অন্যান্য কর্মীদের কঠিন সমস্যা ও শ্রীরামকৃষ্ণ
প্রথম পরিচ্ছেদ
১৮৮২, ১৫ই নভেম্বর
শ্রীরামকৃষ্ণ শ্যামপুকুর বিদ্যাসাগর স্কুলের দ্বারে গাড়ি করিয়া আসিয়া উপস্থিত। বেলা তিনটা হইবে। গাড়িতে মাস্টারকে তুলিয়া লইলেন। রাখাল ও আরও দু-একটি ভক্ত গাড়িতে আছেন। আজ বুধবার ১৫ই নভেম্বর ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দ, কার্তিক শুক্লা পঞ্চমী। গাড়ি ক্রমে চিৎপুর রাস্তা দিয়া গড়ের মাঠের দিকে যাইতেছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ আনন্দময় -- মাতালের ন্যায় -- গাড়ির একবার এধার একবার ওধার মুখ বাড়াইয়া বালকের ন্যায় দেখিতেছেন। মাস্টারকে বলিতেছেন, দেখ, সব লোক দেখছি নিম্নদৃষ্টি। পেটের জন্য সব যাচ্ছে, ঈশ্বরের দিকে দৃষ্টি নাই!
শ্রীরামকৃষ্ণ আজ গড়ের মাঠে উইলসনের সার্কাস দেখিতে যাইতেছেন। মাঠে পৌঁছিয়া টিকিট কেনা হইল। আট আনার অর্থাৎ শেষশ্রেণীর টিকিট। ভক্তেরা ঠাকুরকে লইয়া উচ্চস্থানে উঠিয়া এক বেঞ্চির উপরে বসিলেন। ঠাকুর আনন্দে বলিতেছেন, *“বাঃ, এখান থেকে বেশ দেখা যায়।”*
রঙ্গস্থলে নানারূপ খেলা অনেকক্ষণ ধরিয়া দেখা হইল। গোলাকার রাস্তায় ঘোড়া দৌড়িতেছে। ঘোড়ার পৃষ্ঠে একপায়ে বিবি দাঁড়াইয়া। আবার মাঝে মাঝে সামনে বড় বড় লোহার রিং (চক্র)। রিং-এর কাছে আসিয়া ঘোড়া যখন রিং-এর নিচে দৌড়িতেছে, বিবি ঘোড়ার পৃষ্ঠ হইতে লম্ফ দিয়া রিং-এর মধ্য দিয়া পুনরায় ঘোড়ার পৃষ্ঠে আবার একপায়ে দাঁড়াইয়া! ঘোড়া পুনঃ পুনঃ বনবন করিয়া ওই গোলাকার পথে দৌড়াইতে লাগিল, বিবিও আবার ওইরূপ পৃষ্ঠে দাঁড়াইয়া!
সার্কাস সমাপ্ত হইল। ঠাকুর ভক্তসঙ্গে নামিয়া আসিয়া ময়দানে গাড়ির কাছে আসিলেন। শীত পড়িয়াছে। গায়ে সবুজ বনাত দিয়া মাঠে দাঁড়াইয়া কথা কহিতেছেন, কাছে ভক্তেরা দাঁড়াইয়া আছেন। একজন ভক্তের হাতে বেটুয়াটি (মশলার ছোট থলেটি) রহিয়াছে। তাহাতে মশলা বিশেষতঃ কাবাব চিনি আছে।
[আগে সাধন, তারপর সংসার; অভ্যাসযোগ ]
শ্রীরামকৃষ্ণ মাস্টারকে বলিতেছেন, *“দেখলে, বিবি কেমন একপায়ে ঘোড়ার উপর দাঁড়িয়ে আছে, আর বনবন করে দৌড়ুচ্ছে! কত কঠিন, অনেকদিন ধরে অভ্যাস করেছে, তবে তো হয়েছে! একটু অসাবধান হলেই হাত-পা ভেঙে যাবে, আবার মৃত্যুও হতে পারে। সংসার করা ওইরূপ কঠিন। অনেক সাধন-ভজন করলে ঈশ্বরের কৃপায় কেউ কেউ পেরেছে। অধিকাংশ লোক পারে না। সংসার করতে গিয়ে আরও বদ্ধ হয়ে যায়, আরও ডুবে যায়, মৃত্যুযন্ত্রণা হয়! কেউ কেউ, যেমন জনকাদি অনেক তপস্যার বলে সংসার করেছিলেন। তাই সাধন-ভজন খুব দরকার, তা না হলে সংসারে ঠিক থাকা যায় না।”*
[বলরাম-মন্দিরে শ্রীরামকৃষ্ণ ]
শ্রীরামকৃষ্ণ গাড়িতে উঠিলেন। গাড়ি বাগবাজারে বসুপাড়ায় বলরামের বাটীর দ্বারে উপস্থিত হইল, ঠাকুর ভক্তসঙ্গে দোতলার বৈঠকখানায় গিয়া বসিলেন। সন্ধ্যার বাতি জ্বালা হইয়াছে। ঠাকুর সার্কাসের গল্প করিতেছেন। অনেকগুলি ভক্ত সমবেত হইয়াছেন, তাঁহাদের সহিত ঈশ্বরীয় অনেক কথা হইতেছে। মুখে অন্য কথা কিছুই নাই, কেবল ঈশ্বরীয় কথা।
[Sri Ramakrishna, the Caste-system and the problem of the Untouchables solved]
জাতিভেদ সম্বন্ধে কথা পড়িল। ঠাকুর বলিলেন, *“এক উপায়ে জাতিভেদ উঠে যেতে পারে। সে উপায় -- ভক্তি। ভক্তের জাতি নাই। ভক্তি হলেই দেহ, মন, আত্মা -- সব শুদ্ধ হয়। গৌর, নিতাই হরিনাম দিতে লাগলেন, আর আচণ্ডালে কোল দিলেন। ভক্তি থাকলে চণ্ডাল, চণ্ডাল নয়। অস্পৃশ্য জাতি ভক্তি থাকলে শুদ্ধ, পবিত্র হয়।”*
[সংসারী বদ্ধজীব ]
শ্রীরামকৃষ্ণ সংসারী বদ্ধজীবের কথা বলিতেছেন। *তারা যেন গুটিপোকা, মনে করলে কেটে বেরিয়ে আসতে পারে; কিন্তু অনেক যত্ন করে গুটি তৈয়ার করেছে, ছেড়ে আসতে পারে না; তাতেই মৃত্যু হয়। আবার যেন ঘুনির মধ্যে মাছ; যে-পথে ঢুকেছে, সেই পথ দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে, কিন্তু জলের মিষ্ট শব্দ আর অন্য অন্য মাছের সঙ্গে ক্রীড়া, তাই ভুলে থাকে, বেরিয়ে আসবার চেষ্টা করে না। ছেলেমেয়ের আধ-আধ কথাবার্তা যেন জলকল্লোলের মধুর শব্দ। মাছ অর্থাৎ জীব, পরিবারবর্গ। তবে দু-একটা দৌড়ে পালায়, তাদের বলে মুক্তজীব।*
ঠাকুর গান গাহিতেছেন:
*এমনি মহামায়ার মায়া রেখেছ কি কুহক করে।*
*ব্রহ্মা বিষ্ণু অচৈতন্য জীবে কি জানিতে পারে ৷৷*
*বিল করে ঘুনি পাতে মীন প্রবেশ করে তাতে।*
*গতায়াতের পথ আছে তবু মীন পালাতে নারে ৷৷*
ঠাকুর আবার বলিতেছেন, *“জীব যেন ডাল, জাঁতার ভিতর পড়েছে; পিষে যাবে। তবে যে কটি ডাল খুঁটি ধরে থাকে, তারা পিষে যায় না। তাই খুঁটি অর্থাৎ ঈশ্বরের শরণাগত হতে হয়। তাঁকে ডাক, তাঁর নাম কর তবে মুক্তি। তা না হলে কালরূপ জাঁতায় পিষে যাবে।”*
ঠাকুর আবার গান গাহিতেছেন:
*পড়িয়ে ভবসাগরে ডুবে মা তনুর তরী।*
*মায়া-ঝড় মোহ-তুফান ক্রমে বাড়ে গো শঙ্করী ৷৷*
*একে মন-মাঝি আনাড়ি, তাহে ছজন গোঁয়াড় দাঁড়ি;*
*কুবাতাসে দিয়ে পাড়ি, হাবুডুবু খেয়ে মরি।*
*ভেঙে গেল ভক্তির হাল; ছিঁড়ে পড়ল শ্রদ্ধার পাল,*
*তরী হল বানচাল, উপায় কি করি; --*
*উপায় না দেখি আর, অকিঞ্চন ভেবে সার;*
*তরঙ্গে দিয়ে সাঁতার, শ্রীদুর্গানামের ভেলা ধরি ৷৷*
[Duty to wife and children ]
বিশ্বাসবাবু অনেকক্ষণ বসিয়াছিলেন, এখন উঠিয়া গেলেন। তাঁহার অনেক টাকা ছিল, কিন্তু চরিত্র মলিন হওয়াতে সমস্ত উড়িয়া গিয়াছে। এখন পরিবার, কন্যা প্রভৃতি কাহাকেও দেখেন না। বলরাম তাঁহার কথা পাড়াতে ঠাকুর বলিলেন, *“ওটা লক্ষ্মীছাড়া দারিদ্দির। গৃহস্থের কর্তব্য আছে, ঋণ আছে, দেব-ঋণ, পিতৃ-ঋণ, ঋষি-ঋণ আবার পরিবারদের সম্বন্ধে ঋণ আছে। সতী স্ত্রী হলে তাকে প্রতিপালন; সন্তানদিগকে প্রতিপালন যতদিন না লায়েক হয়।*
*“সাধুই কেবল সঞ্চয় করবে না। ‘পঞ্ছি আউর দরবেশ’ সঞ্চয় করে না। কিন্তু পাখির ছানা হলে সঞ্চয় করে। ছানার জন্যে মুখে করে খাবার নিয়ে যায়।”*
বলরাম -- এখন বিশ্বাসের সাধুসঙ্গ করবার ইচ্ছা।
শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) -- *সাধুর কমণ্ডলু চারধামে ঘুরে আসে, কিন্তু যেমন তেতো, তেমনি তেতো থাকে। মলয়ের হাওয়া যে গাছে লাগে, সে-সব চন্দন হয়ে যায়! কিন্তু শিমুল, অশ্বত্থ, আমড়া এরা চন্দন হয় না। কেউ কেউ সাধুসঙ্গ করে, গাঁজা খাবার জন্য।* (হাস্য) *সাধুরা গাঁজা খায় কিনা, তাই তাদের কাছে এসে বসে গাঁজা সেজে দেয় আর প্রসাদ পায়।* (সকলের হাস্য)
"ওঁ নিরঞ্জনং নিত্যমনন্তরূপং ভক্তানুকম্পাধৃতবিগ্রহং বৈ।
ঈশাবতারং পরমেশমীড্যং তং রামকৃষ্ণং শিরসা নমামি।।"
SRKKA
############################################
No comments:
Post a Comment