Monday, 27 July 2020

SRKA

ওঁ নমো ভগবতে রামকৃষ্ণায় " 🌺🌺🌺

ঠাকুর ছোট খাটটিতে বসিয়া আছেন। বেলা ১১টা হইবে। রাম প্রভৃতি ভক্তেরা ঠাকুরকে নববস্ত্র পরাইবেন। ঠাকুর বলিতেছেন --- "না, না।" একজন ইংরেজী পড়া লোককে দেখাইয়া বলিতেছেন, "উনি কি বলবেন।" ভক্তেরা অনেক জিদ করাতে ঠাকুর বলিলেন --- "তোমরা বলছ পরি।"

ভক্তেরা ওই ঘরেতেই ঠাকুরের অন্নাদি আহারের আয়োজন করিতেছেন।

ঠাকুর নরেন্দ্রকে একটু গান গাইতে বলিতেছেন। নরেন্দ্র গাহিতেছেন :

নিবিড় আঁধারে মা তোর চমকে ও রূপরাশি।
তাই যোগী ধ‍্যান ধরে হয়ে গিরিগুহাবাসী।।
অনন্ত আঁধার কোলে, মহানির্বাণ হিল্লোলে।
চিরশান্তি পরিমল, অবিরল যায় ভাসি।।
মহাকাল রূপ ধরি, আঁধার বসন পরি।
সমাধিমন্দিরে মা কে তুমি গো একা বসি।।
অভয়-পদ-কমলে প্রেমের বিজলী জ্বলে।
চিন্ময় মুখমন্ডলে শোভে অট্ট অট্ট হাসি।।

নরেন্দ্র যাই গাইলেন, 'সমাধিমন্দিরে মা কে তুমি গো একা বসি !' অমনি ঠাকুর বাহ‍্যশূণ‍্য, সমাধিস্থ। অনেকক্ষণ পরে সমাধিভঙ্গের পর ভক্তেরা ঠাকুরকে আহারের জন‍্য আসনে বসাইলেন। এখনও ভাবের আবেশ রহিয়াছে। ভাত খাইতেছেন কিন্তু দুই হাতে। ভবনাথকে বলিতেছেন, "তুই দে খাইয়ে।" ভাবের আবেশ রহিয়াছে তাই নিজে খাইতে পারিতেছেন না। ভবনাথ তাঁহাকে খাওয়াইয়া দিতেছেন।...

"আমি যখন শুদ্ধাভক্তির কথা বলি, যখন বলি শুদ্ধভক্ত, টাকা-কড়ি ঐশ্বর্য কিছু চায় না ; তখন সে বলে, 'তাঁর কৃপাবন‍্যা এলে নদী তো উপচে যাবে, আবার খাল-ডোবাও জলে পূর্ণ হবে। শুদ্ধাভক্তিও হয়, আবার ষড়ৈশ্বর্যও হয়। টাকা-কড়িও হয়।"

ঠাকুরের ঘরের মেঝেতে নরেন্দ্রাদি অনেক ভক্ত বসিয়া আছেন ; গিরিশও আসিয়া বসিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ ( গিরিশের প্রতি ) --- আমি নরেন্দ্রকে আত্মার স্বরূপ জ্ঞান করি; আর আমি ওর অনুগত।

গিরিশ --- আপনি কারই বা অনুগত নন।

শ্রীরামকৃষ্ণ ( সহাস‍্যে ) --- ওর মদ্দের ভাব ( পুরুষভাব ) আর আমার মেদীভাব ( প্রকৃতিভাব )। নরেন্দ্রের উঁচুঘর, অখন্ডের ঘর।

গিরিশ বাহিরে তামাক খাইতে গেলেন।

নরেন্দ্র ( শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি ) --- গিরিশ ঘোষের সঙ্গে আলাপ হল, খুব বড়লোক ( মাস্টারের প্রতি ) --- আপনার কথা হচ্ছিল।

শ্রীরামকৃষ্ণ --- কি কথা ?

নরেন্দ্র --- আপনি লেখাপড়া জানেন না, আমরা সব পন্ডিত, এইসব কথা হচ্ছিল। ( হাস‍্য )

মণি মল্লিক ( ঠাকুরের প্রতি ) --- আপনি না পড়ে পন্ডিত।

শ্রীরামকৃষ্ণ ( নরেন্দ্রাদির প্রতি ) --- সত‍্য বলছি, আমি বেদান্ত আদি শাস্ত্র পড়ি নাই বলে একটু দুঃখ হয় না। আমি জানি বেদান্তের সার, ব্রহ্ম সত‍্য জগৎ মিথ‍্যা। আবার গীতার সার কি ? গীতা দশবার বলে যা হয় ; ত‍্যাগী ত‍্যাগী।

" শাস্ত্রের সার গুরুমুখে জেনে নিতে হয়। তারপর সাধন-ভজন।একজন চিঠি লিখেছিল। চিঠি পড়া হয় নাই, হারিয়ে গেল। তখন সকলে মিলে খুঁজতে লাগল। যখন চিঠি পাওয়া গেল, পড়ে দেখলে পাঁচ সের সন্দেশ পাঠাবে আর একখানা কাপড় পাঠাবে। তখন চিঠিটা ফেলে দিলে, আর পাঁচ সের সন্দেশ আর একখানা কাপড়ের যোগাড় করতে লাগল। তেমনি শাস্ত্রের সার জেনে নিয়ে আর বই পড়বার কি দরকার ? এখন সাধন-ভজন।...

( " শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত " )

জয় শ্রীরামকৃষ্ণ! জয় শ্রীরামকৃষ্ণ! জয় শ্রীরামকৃষ্ণ!



///////////////////////////

No comments: