BG 13.34: Just as one sun illumines the entire solar system, so does the individual soul illumine the entire body (with consciousness).
////////////////COVID
সহযোগী: প্লাজ়মা দান করছেন সায়ন্তন। নিজস্ব চিত্র
////////////////COVID
রটেছিল মৃত্যুর গুজবও, দল গড়ে লড়াইয়ে চিকিৎসক
তাঁর রোগমুক্ত জীবন অন্য রকম হতে পারত। করোনা-কালের হেনস্থা, পরিবারের ভোগান্তির জন্য গুটিয়ে নিতে পারতেন নিজেকে। কিন্তু তেমনটা হতে দেননি সায়ন্তন চক্রবর্তী। বরং করোনা জয় করে রোগের ময়দানেই গুছিয়ে খেলতে নেমেছেন পেশায় চিকিৎসক ওই যুবক।
আক্রান্ত হওয়ার পরে যে পাড়ায় তাঁর মৃত্যুসংবাদ রটানো হয়েছিল, সেই পাড়ার তরুণদের নিয়েই সাহায্যের দল গড়েছেন সায়ন্তন। এ রাজ্যে তিনি প্রথম দিকের করোনাজয়ী প্লাজ়মা দাতাদের অন্যতম। এখন উত্তর দমদমের বাসিন্দা সায়ন্তন ছুটে বেড়াচ্ছেন গোটা শহরে। মানুষকে সচেতন করছেন। পড়শি আক্রান্ত হলে তাঁকে হেনস্থা না করেও কী ভাবে নিরাপদ থাকা যায়, সেই পথ বাতলাচ্ছেন। আর আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছে তাঁর কুইক রেসপন্স টিম।
সম্প্রতি বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া একটি সমবায় আয়োজন করেছিল চিকিৎসা তথা সচেতনতা শিবিরের। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ রোগের চিকিৎসা মেলাও ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এলাকার বাসিন্দা, সরকারি আধিকারিক নীলাদ্রি রায় চিকিৎসকদের নিয়ে আয়োজন করেছিলেন ওই শিবিরের। সেখানে রোগী দেখার সময়েই সায়ন্তনের দিকে ধেয়ে এল একের পর এক প্রশ্ন।
এক জন জানান, তিনি রোজ আদা দিয়ে গরম জল খাচ্ছেন। গার্গল করছেন, সঙ্গে ভিটামিন সি এবং জ়িঙ্ক ট্যাবলেট খাচ্ছেন। তাঁর আর কী করণীয়? সায়ন্তন পরিষ্কার করে দিলেন, কোনওটারই দরকার নেই। কারণ করোনাভাইরাস শরীরে ঢুকলে কোনওটাই ঢাল হয়ে দাঁড়াবে না। সায়ন্তন জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে ভীত হওয়ারও কিছু নেই। কেউ যদি করোনা-আক্রান্তকে স্পর্শও করেন, তা হলে নাকে-মুখে হাত না দিলেই হল। ভাল করে হাত ধুয়ে নিলেই সুরক্ষিত থাকা যাবে।
নিউ টাউনের একটি বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসক সায়ন্তন সংক্রমিত হয়েছিলেন গত এপ্রিলে। তখন করোনা নিয়ে এত সচেতনতা ছিল না। বাড়িতে থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা তখনও হয়নি বলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। মা-বাবাকে পাঠানো হয়েছিল কোয়রান্টিন কেন্দ্রে। পরে আচমকাই সোশ্যাল মিডিয়ায় রটিয়ে দেওয়া হয় সায়ন্তনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করা হয় তাঁর পরিবারকে।
কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? হাসছেন সায়ন্তন। তিনি বলেন, “রোজ অন্তত ৫০টা করে ফোন আসত। আমার পরিবারের কাছে সেই সময়টা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। বাবা-মাকেও হেনস্থা করা হয়েছিল।” তবে হাসপাতাল থেকে ফেরার পর রাগ-অভিমান কমে গিয়েছিল তরুণ চিকিৎসকের। তিনি বলেন, “তখন একটা জিনিস বুঝতে পারলাম, এই রকম অচেনা-অজানা একটা রোগের কাছে মানুষ বড় অসহায়। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। তাঁদের মতো করে সত্যিটা বোঝানো দরকার।” সেরে ওঠার এক মাস পরে প্লাজ়মা দান করেন তিনি।
এলাকায় কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করতে গিয়েও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল তাঁকে। পরে অবশ্য বিষয়টা সহজ হয়ে যায়। প্রত্যেক পাড়া থেকে দু’জনকে দলে নেওয়া হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের ওষুধ-অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে বাড়ি থেকে রক্ত-লালারসের নমুনা সংগ্রহ— সবেতেই পাশে থাকে এই দল। এলাকার এক আক্রান্ত জানালেন, বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করানোর ঝুঁকি তিনি নিতে পেরেছিলেন এই দলের ভরসাতেই।
রাজ্যের বেশ কয়েক জন চিকিৎসক ও করোনাজয়ীরা মিলে তৈরি করেছেন ‘কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক।’ সেই সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত থেকে সায়ন্তন হেল্পলাইনের মাধ্যমে পরামর্শ দেন। তা ছাড়া এলাকায় এলাকায় ঘুরেও প্রচার করছেন। কেউ আক্রান্ত হলে নিজেরা সুরক্ষিত থেকেও কী ভাবে আক্রান্তের পাশে দাঁড়ানো যায়, বোঝাচ্ছেন তিনি।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
No comments:
Post a Comment